আজ ৭ই পৌষ। শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসবের সূচনা। "এই ৭ই পৌষ দিনটি সেই দেবেন্দ্রনাথের দিন", অর্থাৎ তাঁর দীক্ষার দিন
দীক্ষা আজ নানা প্রতিষ্ঠানে, নানা প্রকারে। এখন দীক্ষা মানে অনেকটা ভোটার কার্ডে নাম ওঠানো, বা রেশনকার্ডে নাম ওঠানো। গুরু শিষ্যকে চেনে ফর্মের নাম্বার অনুযায়ী। এখন দীক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক। দলগত হওয়া। গুরু শিষ্যকে চেনে না, যদি না সে বিত্তশালী বা প্রভাবশালী হয়ে থাকে। তবুও সে না চেনাতেও অসুবিধা নেই, চিকিৎসকের যেমন রাম-শ্যাম-যদু-মধুকে জ্বর হলে প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করতে ব্যক্তিগত জানাশোনার দরকার হয় না, এও তেমনি। তোমার নাম্বার কত? মানে শিষ্যত্বের সংখ্যা কত? বড় বড় হাস্পাতালে যেমন রুগীর নাম্বার থাকে, এও তেমন। কয়েদীদেরও শুনেছি অমন নাম্বার থাকে। তাতে শুধু সংখ্যাবৃদ্ধি আর আত্মছলনা। সত্যের সাধন কই?
আজকের দিনে যে দীক্ষাকে কেন্দ্র করে এ উৎসব সে দীক্ষার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন -
"আজকের এই ৭ই পৌষের মাঝখানে তাঁর সেই সত্যদীক্ষার রুদ্রদীপ্তি এবং বরাভয়রূপ দুইই রয়েছে--সেটি যদি আমরা দেখতে পাই এবং লেশমাত্রও গ্রহণ করতে পারি তবে ধন্য হব। সত্যের দীক্ষা যে কাকে বলে আজ যদি ভক্তির সঙ্গে তাই স্মরণ করে যেতে পারি তাহলে ধন্য হব। এর মধ্যে ফাঁকি নেই, লুকোচুরি নেই, দ্বিধা নেই, দুই দিক বজায় রেখে চলবার চাতুরী নেই, নিজেকে ভোলাবার জন্যে সুনিপুণ মিথ্যাযুক্তি নেই, সমাজকে প্রসন্ন করবার জন্যে বুদ্ধির দুই চক্ষু অন্ধ করা নেই, মানুষের হাটে বিকিয়ে দেবার জন্যে ভগবানের ধন চুরি করা নেই। সেই সত্যকে সমস্ত দুঃখপীড়নের মধ্যে স্বীকার করে নিলে তার পরে একেবারে নির্ভয়, ধূলিঘর ভেঙে দিয়ে একেবারে পিতৃভবনের অধিকার লাভ--চিরজীবনের যে গম্যস্থান, যে অমৃতনিকেতন, সেই পথের যিনি একমাত্র বন্ধু তাঁরই আশ্রয়প্রাপ্তি সত্যদীক্ষার এই অর্থ।......
হে দীক্ষাদাতা, হে গুরু, এখনও যদি প্রস্তুত হয়ে না থাকি তো প্রস্তুত করো, আঘাত করো, চেতনাকে সর্বত্র উদ্যত করো--ফিরিয়ে দিয়ো না, ফিরিয়ে দিয়ো না--দুর্বল ব'লে তোমার সভাসদ্দের সকলের পশ্চাতে ঠেলে রেখো না। এই জীবনে সত্যকে গ্রহণ করতেই হবে--নির্ভয়ে এবং অসংকোচে। অসত্যের স্তূপাকার আবর্জনার মধ্যে ব্যর্থ জীবনকে নিক্ষেপ করব না। দীক্ষা গ্রহণ করতে হবে--তুমি শক্তি দাও"