সৌরভ ভট্টাচার্য
30 December 2016
৩০শে ডিসেম্বর, মায়ের জন্মদিন
মায়ের সাথে শেষ জন্মদিনটা কেটেছিল ICU তে, পাঁচ বছর আগে।
মায়ের বেডের পাশে
এক কাপ কমপ্ল্যান আর একটা চামচ নিয়ে বসেছিলাম কয়েক ঘন্টা
মা আচ্ছন্ন অবস্থায়, হাসপাতালের বাইরে সেদিন তুমুল বৃষ্টি
শার্সি দেওয়া জানলার বুক জড়িয়ে জলের স্রোত নামছে অঝোরে
কয়েকটা ভিজে কাক দেখা যাচ্ছে গাছের ডালে পাতার আড়ালে
ভিতরে যান্ত্রিক আওয়াজ - পিক্...পিক্...পিক্...
মায়ের সাথে শেষ জন্মদিনটা কেটেছিল ICU তে, পাঁচ বছর আগে।
মায়ের বেডের পাশে
এক কাপ কমপ্ল্যান আর একটা চামচ নিয়ে বসেছিলাম কয়েক ঘন্টা
মা আচ্ছন্ন অবস্থায়, হাসপাতালের বাইরে সেদিন তুমুল বৃষ্টি
শার্সি দেওয়া জানলার বুক জড়িয়ে জলের স্রোত নামছে অঝোরে
কয়েকটা ভিজে কাক দেখা যাচ্ছে গাছের ডালে পাতার আড়ালে
ভিতরে যান্ত্রিক আওয়াজ - পিক্...পিক্...পিক্...
১লা জানুয়ারি, মায়ের সাথে শেষ কথা হল
বললাম, কেমন আছো?
হেসে বললেন, ভালো। আমার মুখে চোখে হাত বোলালেন।
চোখকে বললাম, শুকাও, দেখো আজ বাইরে বৃষ্টি নেই
শার্সির গায়ে সূর্যাস্তের আলো
বললাম, কেমন আছো?
হেসে বললেন, ভালো। আমার মুখে চোখে হাত বোলালেন।
চোখকে বললাম, শুকাও, দেখো আজ বাইরে বৃষ্টি নেই
শার্সির গায়ে সূর্যাস্তের আলো
২রা জানুয়ারি, শেষবারের মত তাকালেন, চিনতে পারলেন না।
একান্নটা শীত পেরোতে না পেরোতেই যাবার জন্য প্রস্তুত
সেদিনও বাইরে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা, মনে মনে বললুম, এতো বৃষ্টিতেও বেরোবে?
বুকের মধ্যে বরণের সাজ, সলতেগুলো তৈরি
একান্নটা শীত পেরোতে না পেরোতেই যাবার জন্য প্রস্তুত
সেদিনও বাইরে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা, মনে মনে বললুম, এতো বৃষ্টিতেও বেরোবে?
বুকের মধ্যে বরণের সাজ, সলতেগুলো তৈরি
গভীর রাতে একটা ফোন। যে নাড়ী কেটে পড়েছিলুম পৃথিবীর বুকে -
সে নাড়ীর শেষ চিহ্নও গেছে মিলিয়ে, খবর পেলুম।
'জীবনের সাথে জীবন যোগ করা' একটা সাদা চাদরে ঢাকা -
আমার মা। একটা নিথর শরীর।
সেই হাত, সেই পা, সেই মুখ, এমনকি ঠোঁটের আগায় সেই হাসি -
তবু ডাক্তার বলল, নিয়ে যান। কোথায়? বাড়িতে? না না...
বুঝেছি। নিয়ে যাব। আমিই নিয়ে যাব। আমার বরণডালাটা কোথায়? বিসর্জনে যেতে হবে যে!
সে নাড়ীর শেষ চিহ্নও গেছে মিলিয়ে, খবর পেলুম।
'জীবনের সাথে জীবন যোগ করা' একটা সাদা চাদরে ঢাকা -
আমার মা। একটা নিথর শরীর।
সেই হাত, সেই পা, সেই মুখ, এমনকি ঠোঁটের আগায় সেই হাসি -
তবু ডাক্তার বলল, নিয়ে যান। কোথায়? বাড়িতে? না না...
বুঝেছি। নিয়ে যাব। আমিই নিয়ে যাব। আমার বরণডালাটা কোথায়? বিসর্জনে যেতে হবে যে!
হল বিসর্জন। আগুন দু'হাত পেতে নিল। আগুনকে বললুম, আমি কোথায় যাব এখন?
কার কাছে ফিরব?
আগুন উত্তর দিল না। আমার বুকে এসে বসল।
সেই থেকে বুকে আগুন জ্বলছে তো জ্বলছেই, জ্বলুক।
সেই থেকে এই সময়টা আমার দেবীপক্ষ।
মাঝে মাঝে চোখ লাল, অন্যমনস্ক।
"আপনার কি ঠাণ্ডা লেগেছে?” কেউ কেউ বলে।
হ্যাঁ লেগেছে তো, এই সময়টা আমার ভীষণ শীত শীত করে।
কার কাছে ফিরব?
আগুন উত্তর দিল না। আমার বুকে এসে বসল।
সেই থেকে বুকে আগুন জ্বলছে তো জ্বলছেই, জ্বলুক।
সেই থেকে এই সময়টা আমার দেবীপক্ষ।
মাঝে মাঝে চোখ লাল, অন্যমনস্ক।
"আপনার কি ঠাণ্ডা লেগেছে?” কেউ কেউ বলে।
হ্যাঁ লেগেছে তো, এই সময়টা আমার ভীষণ শীত শীত করে।
এখন এক পা, এক পা হাঁটতে শিখছি
নিজে নিজে, যদিও চারপাশে বদলে গেল অনেক কিছু
নতুন পোশাকে পুরোনো লোকেদের ভিড়
অ-নাথ নই, অ-মা হয়ে হাঁটছি গন্তব্যহীন পথ
কবিতার সাথে
আগাছার বাগানে বুনোফুল ফোটানোর নেশায়
ওতেই বাঁচি এখন,
নিজে নিজে, যদিও চারপাশে বদলে গেল অনেক কিছু
নতুন পোশাকে পুরোনো লোকেদের ভিড়
অ-নাথ নই, অ-মা হয়ে হাঁটছি গন্তব্যহীন পথ
কবিতার সাথে
আগাছার বাগানে বুনোফুল ফোটানোর নেশায়
ওতেই বাঁচি এখন,
আর মা? এই তো আবার আমার চারপাশে, এমনকি আমার 'আমি' তে মিশেও হাসছে
মাঝে শুধু একটা কাঁচের মত দেওয়াল
প্রশ্বাসের আর নিঃশ্বাসের
মাঝে শুধু একটা কাঁচের মত দেওয়াল
প্রশ্বাসের আর নিঃশ্বাসের