Skip to main content
 
কানে এল সমুদ্রের গর্জন। জানলা খুলি। দরজা খুলি। সমুদ্র কই? কোথায় সমুদ্র?
 
একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আপাদমস্তক আছি ভিজে। সমুদ্রের জলে নোনতা শরীর। একে তাকে জিজ্ঞাসা করি, তোমরা কি জানো আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোথাও আছে একটা?
 
কি আছে?
 
সমুদ্র।
 
কেউ গেল রেগে, ভাবল ঠাট্টা করছি। কেউ হেসে উড়িয়ে দিল, ভাবল মাথাটা খারাপ হল। কেউ ব্যঙ্গ করে পুকুরের স্থির জল দেখিয়ে বলল, এই তো।
 
অনেক রাত জেগে কাটালাম। কখনও শুনি দূর থেকে গর্জন। কখনও নোনতা বাতাস লাগে মুখেচোখে। কিন্তু সে কই? কই তুমি?
 
সমুদ্রের ঢেউ লাগল একদিন বুকের সব কটা পাঁজর কাঁপিয়ে, ছিলাম অন্যমনস্ক তখন। চীৎকার করে যন্ত্রণায় কেঁদে উঠে বললাম, কে? কে? এত নিষ্ঠুর, এমন প্রবল কে তুমি?
 
দেখলাম আমার সবকটা পাঁজরে ছড়িয়ে বালি। বুঝলাম সে আর কেউ নয়, আমার সে সমুদ্র।
 
সেই আঘাতে, সেই প্রবল আঘাতে, সেই অতর্কিত আঘাতে - পাঁজর ঘিরে হল দীঘি। একদিন সমস্ত মন ঘিরে জমল কালো ঘন মেঘ। বৃষ্টি হল কত দিন, কত মাস, কত বছর, কত যুগ ধরে। দীঘিতে জমল জল। নোনতা জল। বুঝলাম এ জল পাঠালো কে।
 
কিন্তু সে দীঘি আজও পূর্ণ হল কই? বরং রুক্ষ হল কতবার আমার অহংকারে। শূন্য হল দীঘি। চিড় ধরল হৃদি অববাহিকায়। এ যন্ত্রণা হল অসহ অবহ, এ তো আমার আনা দুঃখ। কাঁদলাম নিজেরই বোধহীন পাষাণে মাথা ঠুকে। আবার হল মেঘ। আবার হল বৃষ্টি। আবার জমল জল। নোনতা জল। নোনা মাটি। নোনা হৃদয়।
 
তবু সে দীঘির জলে আকাশের ছায়া। নক্ষত্রের আলো। পথিকের শ্রান্তিহরা সুখ।
 
আর আমি?
 
সমুদ্রের নোনা হাওয়ায় জাগা দীঘির ক্ষণিকের ঢেউ।